আমাদের সাহিত্য ব্লগে আপনাদের স্বাগতম। ইদানিং দেখছি, লেখকরা বাংলা বর্ণের অনেক ভুল ব্যবহার করে থাকেন। যে বর্ণগুলোর সবচেয়ে বেশি ভুল ব্যবহার হয় তার মধ্যে 'ন ও ণ", কি ও কী, " ই, ও এবং য়' উল্লেখযোগ্য। আমাদের বাংলা ভাষা খুবই সুন্দর এবং সুমধুর একটি ভাষা। এ ভাষায় অনেকগুলো বর্ণ এবং সাথে অনেক সহযোগি চিহ্ন ব্যবহৃত হওয়ায় প্রায় সকল ধরণের উচ্চারণই এ ভাষায় করা যায়, যা পৃথিবীর অনেক ভাষাতেই সম্ভব হয় না। আবার বর্ণ ও সহযোগি চিহ্নের আধিক্যের কারণে ভুলও হয় বেশি। তাই আমাদের সাহিত্য সংগঠন #খোয়াইস্বর_সাহিত্য_চক্র এর ফেসবুক গ্রুপে আমরা শুদ্ধ বানান চর্চার বিশেষ ব্যবস্থা রেখেছি। এটা যেহেতু খোয়াইস্বর এরই ব্লগ, তাই এখানেও চেষ্টা করছি পাঠকদের এ বিষয়ে কিছু ধারণা দেওয়ার।
আজ আমি "ন ও ণ" এর সঠিক ব্যবহার, "কি ও কী" এর সঠিক ব্যবহার এবং "ই, য় এবং ও" এর সঠিক ব্যবহার নিয়ে এই কনটেন্ট টি সাজিয়েছি। আশা করি অনেকেরই উপকারে আসবে। আপনাদের মতামত আশা করছি। আশা করছি কমেন্ট করে মতামত জানাবেন। প্রথমেই দেখা যাক্ "ন ও ণ" এর সঠিক ব্যবহার।
(১) "ন-ও-ণ"-এর-সঠিক-ব্যবহার:
যেসব কারণে দন্ত্য-ন মূর্ধন্য-ণ হয়:
(ক) ঋ, র, ষ বর্ণের পরে "দন্ত্য- ন" "মূর্ধন্য-ণ" হয়; যেমন: ধারণা, দারুণ, কারণ, বরণ, ধরণী, ঋণ, ঘৃণা ইত্যাদি।
(খ) আ-কার এর কারণে "মূর্ধন্য-ণ" হয়। যেমন: দরুন ও ধরন বানানে দন্ত্য-ন এবং দারুণ ও ধারণ/ধারণা বানানে মূর্ধন্য-ণ হয়। মনে রাখতে হবে "দ" বা "ধ" এর সাথে আ-কার বসলে পরে মূর্ধন্য-ণ হয় এবং আ-কার না থাকলে দন্তন্য-ন হয়।
(গ) যদি ঋ, র, ষ বর্ণের পরে স্বরবর্ণ, ক-বর্গ, প-বর্গ, য, ব, হ থাকে, তাহলে তার পরবর্তী "দন্ত্য-ন" "মূর্ধন্য-ণ" হয়ে যায়; যেমন: পণ্ডিত গ্রহণ, শ্রবণ, নির্মাণ, নির্বাণ, কৃপণ ইত্যাদি।
(ঘ) ট-বর্গের পূর্বের "দন্ত্য -ন" "মূর্ধন্য-ণ" হয়; যেমন:
ঠাণ্ডা, খণ্ড, লুণ্ঠন, বন্টন ইত্যাদি।
যেসব কারণে "দন্ত-ন মূর্ধন-ণ হয় না:
(ক) বিদেশী শব্দের "দন্ত্য-ন" কখনও "মূর্ধন্য-ণ" হয় না; যেমন: ইন্দোনেশিয়া, ফ্রান্স, স্প্যান, জার্মান, লন্ডন, ইন্ডিয়া, মডার্ন, ইস্টার্ন, কর্নার, হর্ন, টার্ন, পেন্সিল পেন্টাগন ইত্যাদি।
(খ) বাংলা ক্রিয়াপদের অন্তঃস্থিত "দন্ত্য-ন" "মূর্ধন্য-ণ" হয় না; যেমন: করুন, ধরুন ইত্যাদি।
(গ) সন্ধি বা সমাস নিষ্পন্ন শব্দে "মূর্ধন্য-ণ" হয় না: দুর্নাম, দুর্নিবার, দুর্নাম ইত্যাদি।
(২) কি ও কী এর সঠিক ব্যবহার:
কি এর সঠিক ব্যবহার:
(ক) যেসব প্রশ্নের জবাব মাথা নেড়ে, হ্যাঁ অথবা না দ্বারা কিংবা সার্বজনীন ইশারায় দেওয়া যায়, সেক্ষেত্রে "কি" ব্যবহৃত হয়। যেমন:
সে কি স্কুলে গিয়েছিলেো?
তুমি কি কাজটি করেছিলে?
কি গ্রীষ্ম কি শীত!
এভাবে ব্যবহৃত এই 'কি' শব্দটি হচ্ছে অব্যয় পদ।
(খ) অন্য বর্ণের সাথে হলে 'কি' ব্যবহৃত হয়। যেমন:
মাহিয়া আজ দুপুরে ভাত খেয়েছে কিনা জানি না।
কবির নাকি ঢাকা যায় নি?
তুমি কিসে পড়াশুনা করছো?
কী এর সঠিক ব্যবহার:
(ক) যেসব প্রশ্নের জবাব মাথা নেড়ে, হ্যাঁ অথবা না দ্বারা অথবা সার্বজনীন ইশারায় দেওয়া যায় না, বরং কিছু জানতে চাওয়া হয়, সেক্ষেত্রে কী হবে। যেমন:
তুমি কী খেয়েছো?
কী করছো?
তুমি কী বিষয়ে পড়াশুনা করছে?
উল্লেখ্য, এভাবে ব্যবহৃত "কী" শব্দটি হচ্ছে সর্বনাম পদ।
বিভিন্ন পদরূপে "কী" ব্যবহৃত হয়। যেমন:
তুমি কী খাবে? -- সর্বনাম
কী আনন্দ! -- বিশেষণ
কী অপরূপ! কী সুন্দর! -- বিশেষণের বিশেষণ
কীভাবে? -- ক্রিয়া-বিশেষণ (কীভাবে বানানটি নিয়ে মতভেদ রয়েছে, কেউ বলেন কিভাবে হবে)।
(৩) ই, ও এবং য় এর সঠিক ব্যবহার:
(ক) যখন বাক্যের কর্তা হন উত্তম পুরুষ (1st Person), তখন ক্রিয়াপদের শেষে 'ই' হবে। যেমন: আমি যাই।
এছাড়া কোন শব্দের উপর জোর দেওয়ার জন্যও ওই শব্দের শেষে 'ই' হয়। যেমন:
আমি করবোই ( আর কেউ নয়, আমিই করবো)
আমাকে যেতেই হবে (অর্থাৎ আর কেউ না, আমাকেই যেতে হবে)
(খ) কর্তা মধ্যম পুরুষ (2nd Person) হলে ক্রিয়াপদের শেষে 'ও' হবে। যেমন: তুমি যাও।
এছাড়াও also বা too বুঝাতে শব্দের শেষে 'ও' থাকে। যেমন: আমিও কাজ করবো।
(গ) কর্তা নাম পুরুষ(3rd Person) হলে ক্রিয়াপদের শেষে 'ই' হবে। যেমন: সে যায়।
কোন শব্দের শেষে 'য়' বিভক্তি আকারেও থাকতে পারে। যার অর্থ ক্ষেত্র বিশেষে ভিন্ন হয়। যেমন: আমার বাবা বাসায় (বাসা তে) এসেছে।
আশা করি অনেকেরই উপকারে আসবে আমার এ কন্টেন্টটি। আজ এ পর্যন্তই। পাঠকের সাড়া পেলে চালিয়ে যাবো ইন্শাআল্লাহ্।
Comments
Post a Comment